সত্য ও সময়ের সাথে চলব

Powered by Blogger.

বিবাহ

বিবাহ কি ?
মানুষ যা ধারন করে সেটাই তার ধর্ম আর যা সে বহন করে সেটা হল বিবাহ। বিবাহ তাই একটা প্রতিজ্ঞা পূরণ।বিশেষ রুপে বহন করা এক যৌথ দায়িত্ব। সে দায়িত্ব হল - আমরা পরস্পরকে ভালবাসব। পরস্পরের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য উপভোগ করব। ভালবাসবো আমরা সন্তানকে। আমরা যখন থাকব না, আমাদের এই ভালবাসা বেঁচে থাকবে আমাদের সন্তানদের মধ্যে।প্রজননক্ষম দুই নরনারীর স্থায়ী যৌন সম্পর্ককে বৈধতা দেওয়া। তার সামাজিক উদ্দেশ্যও আছে। সেটি হল বৈধ সন্তান-সন্ততি বা ভবিষৎ প্রজন্ম তৈরি করে যাওয়া। সেই সংগে নারীপুরুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আদি যুগে পুরুষের বহুবিবাহ প্রথা। আর আজ বহু বিবাহ প্রায় সবজায়গায় আইনত নিষিদ্ধ। কেনিয়ার কিপসিগিস উপজাতিরা বহু বিবাহ করতে পারে কিন্তু তাদের স্ত্রীদের আলাদা আলাদা গ্রামে থাকতে হয়। কোনো কোনো দেশের রাজপরিবারে আজও অসংখ্য স্ত্রী রাখার প্রথা আছে। কিন্তু একক বিবাহ সারা বিশ্ব জুড়ে চালু হলেও নারী-পুরুষের আদীম প্রবৃত্তি আজও বহু বিবাহের অনুকূলে থেকেই গেছে। আইকে কলা দেখিয়ে পুরুষ ও মেয়েরা গোপনে বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক গড়ে তুলছে। নারীর একাধিক পুরুষকে এক সংগে বিবাহ কোনো যুগেই মূল ধারার অংশ ছিল না। তবু ব্যতিক্রমী প্রথা হিসেবে কোনো কোনো ক্ষুদ্র গোষ্ঠির মধ্যে তাও চালু ছিল। হয়তো সে সমাজে প্রয়োজনীয় পুরুষের সংখ্যা কম ছিল বলে হয়তো এই প্রথা এসছিল।

তিব্বতে অনেক গুলো ভাই একটি মেয়েকে বিয়ে করত। ভারতের হিমাচল প্রদেশের কিন্নর ইপজাতির মধ্যে বহুপতি বা পলিয়েড্রি আজও প্রচলিত। কোনো কোনো জাতির মধ্যে কাজিন বিবাহ প্রচলিত। মামা-ভাগ্নীর মধ্যে বিয়েও কোথাও কোথাও প্রচলিত। সব দেশেই বিয়েতে বর কনের চেয়ে বয়সে বড় হতে হয়। কিন্তু পৃথিবীতে একমাত্র কেনিয়াতেই কনেকে বরের চেয়ে বয়সে বড় হতে হয়।

ইউরোপ আমেরিকায় খ্রিষ্টানদের বিবাহের এনগেজমেন্ট ঘোষণা মূল বিয়ের মতই সমান গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামেও তাই। খ্রিষ্টানদের চার্চে গিয়েই এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান করতে হয়। ইংল্যান্ডে এনগেজমেন্ট ঘোষনার পরে পাত্রপক্ষ যদি বিয়ে না করে, তাহলে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের জন্য মেয়ে আদালতে মামলা করতে পারে। ক্ষতিপুরণ দিতে বাধ্যও করাতে পারে। হিন্দু বিবাহে আশীর্বাদ হয়েও বিয়ে ভেঙে যায়। আজকাল বিয়ের দিনই আশীর্বাদ করা হিন্দুদের একটা প্রথা হয়ে দাড়িয়েছে।বিয়ের যৌন সংসর্গ আমাদের দেশের ছেলেমেয়ের পক্ষে এখনও প্রতা বিরুদ্ধ ও লজ্জাকর।

এদেশে গর্ভবতী মেয়ের বিয়ের পিঁড়িতে বসার ঘটনা এখনও খুবই কম। এমন পরিস্থিতি ঘটলে তারা রেজিস্ট্রি বিয়ে করে নেয়। কিন্তু ইউরোপ আমেরিকায় এসক কোনো লজ্জার ব্যাপার নয়। আমেরিকায় ৬৫ শতাংশ মেয়ে গর্ভবতী অবস্থায় বিয়ে করে। অনেক ধর্মেেই বিবাহিতা নারী এয়োতির চিহ্ন ধারণ করে বেড়ায়। খ্রিষ্টানরা পরে তাকে আংটি। হিন্দু নারীরা পরে শাঁখা অথবা মঙ্গল সুত্র। অনেক মেয়ে বিয়ের পরও টাইটেল বদলায় না। আবার কেউ কেউ স্বামী ও বাপের বাড়ির টাইটেল উভয় ব্যবহার করে। বিয়ে সব দেশেই ধর্মের সাথে যুক্ত। ধর্মীয় বিয়ের সাথে সব দেশেই যুক্ত আছে নানা লোকাচার, খাওয়া-দাওয়া এবং গান বাজনা। ধর্মীয় বিয়েতে বর কনের বিয়ের পোশাকও বিশেষ ভাবে তৈরি হয়। বউ যখন চিরদিনের জন্য বাপির বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি চলে যায়, তখন সব ধর্মে সেই অনুষ্ঠানের সংগে নানা পতীকী লোকাচার পালিত হয়।

গ্রিসে মেয়ে শ্বশুর বাড়ি যাবার সময় মেয়ের চুল কেটে ফেলা হয়। তার ছোট বেলার খেলার পুতুল ঈশ্বরকে দিয়ে যায়। ইহুদি কনেরা বাপের বাড়ি ছেড়ে যাবার সময় একটি গ্লাস ভেঙে দিয়ে যায়, যা পুরোনো সংসার ছেড়ে যাওয়ার প্রতীক। বাঙালী হিন্দু বর বিয়ে করতে যাবার সময় ও বউ নিয়ে ফেরার সময় নানা রকমের লোকাচার পালন করে। বিয়ের সময় বর কনের গাঁটছড়া বাঁধা, হাতে হাত রাখা, মালা বা আংটি বদল করা অনেক দেশেরই রীতি।

মেক্সিকোর আজটেকরা মেয়ের বিয়ের পর মেয়ের বাবা-মা চারদিন ধরে উপোস করে প্রার্থনা করে মেয়ের মঙ্গলের জন্য। চারদিন পর একদিন আত্নীয়-বন্ধু ভোজ হয়। সেদিন পরিবারের সকলে বাচ্চা-কাচ্চা, অতিথি মিলে এক শোভা যাত্রা  বের করে। খ্রিস্টান বিয়ের তিনটে রবিবার আগে চার্চের পাদ্রী বিয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষনা করে। চতুর্থ রবিবার বিয়ে হয়। এই ঘোষণা নোটিশের আকারে চার্চের অফিসে টাঙিয়ে দেয়া হয়। এই ঘোষণার তিন মাসের মধ্যে বিয়ে হতে হয়।
0 Komentar untuk "বিবাহ"

Back To Top